মুন্সীগঞ্জের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর
বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ অতীশ দীপঙ্কর মুন্সীগঞ্জের অহংকার। ৯৮২ সালে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৩১ বছর বয়সে তিনি শ্রীলংকায় গমন করেন ও পরে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাচার্য পদে আসীন হন। ১০৪১ সালে হিমালয় অতিক্রম করে তিনি তিববতে যান। তাঁর অসাধারণ পান্ডিত্যের কারণে তিববতীরা তাঁকে অত্যন্ত সম্মানজনক ‘অতীশ’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১০৫৪ সালে তিনি দেহত্যাগ করেন।
জগদীশ চন্দ্র বসু
মুন্সীগঞ্জকে আলোকিত করা মনীষীদের আরেকজন শ্রেষ্ঠ মানুষ জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি ১৮৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ভগবান চন্দ্র বসু। পৈত্রিক নিবাস শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল গ্রামে। জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমান করেছিলেন যে, মানুষের মতো গাছেরও প্রান আছে। ১৯১৫ সালে তিনি ‘নাইট’ বা স্যার উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯১৭ সালে তিনি বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস
একজন বাঙালী যিনি সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের সোনার ছেলে চিত্তরঞ্জন দাস। ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ যাকে ‘দেশবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেছে। ১৮৭০ সালে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার তেলীরবাগ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলার যে ক’জন সুস্থ চিন্তাধারার রাজনীতিবিদ জাতীয় উন্নতি বিধানে ভূমিকা পালন করেন চিত্তরঞ্জন দাস তাদের অন্যতম। ১৯২৫ সালের ১৬ জুন তিনি মারা যান।
সরোজিনী নাইডু
ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী মহিলা নেতা ছিলেন সরোজিনী নাইডু। তাঁর পৈত্রিক বাড়ী ছিল মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে। ১৮৭৯ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারী তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সর্বভারতীয় রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক সরোজিনী নাইডু কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ও এক সময়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি বাগ্মী ও ইংরেজী ভাষার যশস্বী কবি ছিলেন।
সত্যেন সেন
জন্ম ১৯০৭ সাল, মৃত্যু ১৯৮১ সাল। টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রাম তাঁর পৈতৃক ভিটা। সত্যেন সেন ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। এই প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে বহুবার কারাবরণ করেছেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’র তিনি প্রতিষ্ঠাতা।
জিতেন ঘোষ
লৌহজং থানার কুমার ভোগ গ্রামের অধিবাসী জিতেন ঘোষ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পুরোধা ছিলেন। চিরকুমার জিতেন ঘোষ সারা জীবন কৃষক ও মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। জেল খেটেছেন যুগের পর যুগ। তিনি বহু গ্রন্থের প্রণেতা।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
১৮৮৮ সালের ১৯ মে সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস মুন্সীগঞ্জের মালপদিয়া গ্রামে। বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী এই ঔপন্যাসিক ‘পদ্মানদীর মাঝি,’ পুতুল নাচের ইতিকথা’সহ অনেকগুলি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে অমর হয়ে আছেন।
বুদ্ধদেব বসু
কবি বুদ্ধদেব বসুর পৈত্রিক নিবাস মুন্সীগঞ্জের মালখানগরে। তিরিশের দশকের অন্যতম সেরা কবি বুদ্ধদেব রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে দাড়িয়ে কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।
সমরেশ বসু
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক। ১৯২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের রাজানগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘কালকূট’ ছদ্মনামেও বহু উপন্যাস লিখেছেন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
আজকের উভয় বাংলার নন্দিত ঔপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পৈত্রিক নিবাস মুন্সীগঞ্জে। অনন্য গদ্যশৈলী ও বিষয় বৈচিত্রের কারণে বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবস্থান অনেক উঁচুতে।