কোন অপরাধে ক্ষমতাসীন দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিচার খুব দ্রুত হয়
বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
অপরাধ অপরাধই, আর অপরাধী অপরাধীই সে যে দলেরই হউক না কেন। অপরাধীকে তার অপরাধ দিয়েই বিচার করা উচিত, তার দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে নয়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ দেখা যাচ্ছে আপরাধীকে সামাজিকভাবে দলীয় দৃষ্টি কোন থেকে দেখা হয়। সরকার দলীয় কোন ব্যাক্তি কোন অপরাধের সাথে জড়িত থাকলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক সমালোচনা হয়। পত্র-পত্রিকা তথা মিডিয়া তখন দলীয় বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে। আর সরকার বিরোধীরা তখন সুশিল সমাজের লোক সেজে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যপক প্রচারনা চালায়। অপরাধীর ছবিসহ অন্যান্য তথ্য তখন মিডিয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপকভাবে প্রচার হতে থাকে। বিষয়টিকে নিয়ে সরকার বিরোধী দল কিংবা ছাত্রসমাজ রাস্তায় নামে। আর সুশীলরা প্রেসক্লাব কিংবা অন্যান্য মিডিয়া সংশ্লিষ্ট স্থানে একেরপর এক আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকে। সরকার কিংবা সরকারী দলকে ঘটনার সাথে সুকৌশলে জড়ানোর চেষ্টা করা হয় এই সমস্ত অনুষ্টানগুলিতে। কিন্তু সরকার বিরোধী দলের লোকেরা এমন ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে তা হালে প্রচার পায়না।
আওয়ামীলীগ সমর্থন করেন গ্রামের এমন কোন মেব্বার যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন বৈধ কিংবা অবৈধভাবে তখন এই সামাজিক বিষয়টিকে সুকৌশলে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া হয় প্রতিপক্ষ দল থেকে। এই মেম্বার সাহেবকে তখন এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন তিনি থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি। আর এই অপপ্রচারের প্রচেষ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে আরো কুৎশিতভাবে। প্রেমের টানে পালিয়ে বিয়ে করে, এই ঘটনা আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়। এইটা আমাদের সমাজের সামাজিক একটা বিষয়। ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামীলীগের কোন সদস্য যদি এমন কিছু করেন তা হলে এই সামাজিক বিষয়টিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। যদিও বিষয়টি একেবারেই রাজনৈতিক নয়। এমন ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামীলীগের কোন এক গ্রামের সাধারন সদস্যও যদি জড়িত থাকে তাহলে তাকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামীলীগের নেতা হিসাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
আমাদের মিডিয়ার লোকেরা কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে আগে খুঁজে তাতে আওয়ামীলীগের কোন লোক জড়িত কিনা। তাহলে এই খবরের মজা ও বিশেষনই আলাদা হয়ে যায়। সুকৌশলে চেষ্টা চলে অপরাধীর দলীয় পরিচয়টিকে সামনে নিয়ে আসার জন্য। ফলে অপরাধ রাজনৈতিক রুপ পরিগ্রহ করে। অপরাধীকে তখন সরকার দলীয় ওমোক নেতার শিষ্য কিংবা কেডার ইত্যাদি বলার চেষ্টা বা বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি বরগুনায় প্রকাশ্যে দিবালোকে বহু মানুষের সামনে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় রিফাত শরীফকে। এই ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। আর এই ঘটনাটিতেও ক্ষমতাশীন দলকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে। কোন কোন মিডিয়ায় বলা হয়েছে খুনীরা আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় আছে। রিফাতের খুনী নয়ন বন্ড( ২৪) সমন্ধে কোন কোন মিডিয়া লিখেছে সে ছাত্রলীগের সমর্থক। কিন্তু তার কোন পদ পদবী নেই। তথাপিও তাকে ছাত্রলীগের নেতা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে অনেক নিউজ মিডিয়ায়। ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্টতার তেমন কোন প্রমান না পাওয়ায় এই হত্যাকান্ডটিকে চেষ্টা সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার কিংবা আওয়ামীলীগ কিংবা ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি সরকার বিরোধী ব্লগার কিংবা তথাকথিত সুশিলরা।
আর উপরোক্ত ঘটনাবলী যদি ছাত্রদল, যুবদল কিংবা বিএনপি-জামাতের কোন সদস্য করে থাকেন তা হলে মিডিয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় পরিচয় আসেনা। ফলে দেখা যায় কোন অপরাধের সাথে ক্ষমতাসীন দলের কোন সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকলে তার দ্রুত বিচার হয় সামাজিক চাপে। অপরদিকে সরকার বিরোধীরা জড়িত থাকলে তা তেমন প্রচারেও আসে না, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিচারের দাবিও উঠে না। ফলে বিচার তুলনামুলকভাবে বিলম্বিত হয়। দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আছে, প্রতিদিন এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় কিছু মানুষ মারা যাবে, কিছু আত্নহত্যার ঘটনা ঘটবে, কিছু খুনখারাবি, চুরি-ডাকাতি হবে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটবে -এইটা খুবই স্বাভাবিক। যদিও আমারা একটি মৃত্যু কিংবা অপরাধও আশা করিনা এই ঘটনাগুলিকে রাজনৈতিকভাবে দেখা উচিত না। তবে এই বিষয়গুলিকে রাজনৈতিকভাবে দেখলে সমাজে বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশন মোটেও কাম্য নয়।