ব্রিটিশ আমল থেকেই হিন্দু-মুসলিম দেশান্তর শুরু
বিডি খবর ৩৬৫ ডটকমঃ
ব্রিটিশ আমলে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ অবিভক্ত ছিল। আর ৩ দেশ মিলেই ছিল পাক-ভারত উপমহাদেশ।। ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারত বর্ষ শাসন করেছে। পরে তারা ১৯৪৭ সালে এই উপমহাদেশকে স্বাধীনতা দান করে। অবশ্য এই স্বাধীনতার জন্য অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। একই সময়ে তারা পাক-ভারত উপমহাদেশ থেকে পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেয়। আর এই পাকিস্তানে ছিল তখন পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। আর এই সময়টাকেই বলা হয় দেশ বিভাগ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম হয় বাংলাদেশ।
ব্রিটিশ আমল থেকেই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগে থেকে পাক-ভারত উপমহাদেশ থেকে হিন্দু-মুসলিম দেশান্তর শুরু হয়। সেই সময়ে বর্তমান ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হয়। তখন পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দুরা ভারতে গমন করে সেখানে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। ভারতে তখন হিন্দুর সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় হিন্দুরা নিরাপদ ভেবে ভারতে চলে যায়। অপরদিকে বর্তমান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলমান দেশান্তর হয়ে স্থায়ীভেবে বসবাস শুরু করে। দেশ বিভাগের পরও বেশ কয়েকবার ভারত, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান জুড়ে বেশ কয়েকবার হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধে। এই দাঙ্গার সময় প্রচুর হিন্দু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে যায়। অপরদিকে ভারত থেকে প্রচুর মুসলমান পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসে। ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যা কমতে থাকে। অপরদিকে ভারতেও মুসলিম জনসংখ্যা ব্যপকভাবে কমতে থাকে। এ ছাড়াও জীবন জিবিকার তাগিদে উন্নত জীবন যাপনের জন্য অনেক হিন্দু আমেরিকা-ইউরোপে চলে যায়। ফলে এভাবেও দুই পাকিস্তানে হিন্দুর সংখ্যা কমতে থাকে। অপরদিকে ভারত থেকেও অনেক মুসলমান আমেরিকা-ইউরোপে যেয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ফলে ভারতে মুসলমানের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কমতে থাকে। অপরদিকে দুই পাকিস্তানে হিন্দুর সংখ্যা কমতে থাকে।
১৯৫১ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় সেই সময়ে পাকিস্তানে হিন্দু-মুসলিম জনসংখ্যার আনুপাতিক হার ছিল যথাক্রমে ২২% ও ৭৬.৯%। ২০১১ সালে যা দাঁড়ায় ৮.৫% ও ৯০.৪%। নিন্মে পরিসংখ্যান দেওয়া হল।১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় প্রচুর হিন্দু বাংলাদেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে ভারতের কলকাতা, আসাম, ত্রিপুরাসহ অন্যান্য প্রদেশে যেয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজনৈতিক কারনে হিন্দুদের ব্যপকভাবে নির্যাতন করত। তাই এই সময়ে বিপুল সংখ্যক হিন্দু ভারতে আশ্রয় গ্রহন করে। বাংলাদেশ থেকে এখনো অনেক হিন্দু ব্যবসা-বানিজ্য কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে চলে যায়। আবার অনেকের আত্নীয় স্বজন ভারতে থাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য তারা ভারতকেই তাদের উত্তম আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়েছ। এটা কোন অপরাধ নয় এবং এই প্রক্রিয়াটাকে কোন অবস্থাতেই নির্যাতনের কারনে ভারতে চলে যাচ্ছে বলা যাবে না। ভারত থেকেও বিপুল সংখ্যক মুসলমান বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় গ্রহন করেছে। এর মধ্য বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় ভারত থেকে আসা বিপুল সংখ্যক মুসলমান রয়েছে। এমনকি সদ্য প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদও ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে ১৯৪৮ সালে রংপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এরশাদ সাহেবের গোটা পরিবারই রংপুরে চলে আসে সেই সময়ে। রাজনৈতিক ও সামাজিক পট পরিবর্তনের কারনেই এমনটি ঘটেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুসহ মাইনরিটি সমাজ পূর্ণ সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করে বসবাস করছে। বিগত ১০ বছর সময়ে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে হিন্দুদের ওপর আক্রমনের চেষ্টা করা হলেও সরকার তা কঠোর হস্তে দমন করছে। সকল শ্রেনীর মানুষ সমভাবে সরকারী ও নাগরিক সুযোগ সুবিদা ভোগ করছে। বাংলাদেশ এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর এই সময়ে মহল কিংবা ব্যক্তি বিশেষের বিদেশী কোন সরকার প্রধানের কাছে মাইনরিটি সমাজের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ডাহা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়।
বাংলাদেশ থেকে এখনো প্রচুর পরিমানে সকল ধর্মের মানুষ উন্নত জীবন ও জিবিকার জন্য আমেরিকা-ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছে। এটাকে নিখোজ কিংবা গুম হয়ে গেছে তা কোন ক্রমেই বলা সমেচীন হবে না। আর এদেশে হানাহানি কিংবা জবরদস্তি যা হচ্ছে তা কোন একটি নিদৃষ্ট ধর্মের মানুষকে টার্গেট করে নয়। মুসলমান-মুসলমানে সামাজিক সমস্যা হচ্ছে। আবার মুসলমান-মাইনরিটিতেও সমস্যা হচ্ছে। অতীতে কোন কোন সরকারের সময় হয়ত মানরিটি বিশেষ করে হিন্দু সমাজের ওপর কিছুটা জবরদস্তি হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটি একেবারেই অনুপস্থিত।