অনেক দেরীতে হলেও সরকারের দুর্নীতি বিরোধী বর্তমান অভিযানে দেশবাসী খুশী
বিডি খবর ৩৬৫ ডটকমঃ
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতিতে এগুচ্ছে সরকার। এবার নিজ দলের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে আওয়ামীলীগ সরকার। আর এই অভিযানের ফলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও দুর্নীবাজরা ধরা পড়ায় দেশবাসী খুশী। কয়েকদিন আগে আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের মধ্য যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও দখলবাজ রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠিন হুশিয়ারী উচ্চারন করেছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নড়েচড়ে বসেছে ও একের পর এক অভিযান অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযানে যুবলীগের বড় বড় চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ছেন।
গত সপ্তাহে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের বাজেট থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই দুইজনের কর্মকাণ্ডে সরকার প্রধান বিব্রত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে এই কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেন। ছাত্রলীগের ইতিহাসে চাঁদাবাজির দায়ে ছাত্রলীগের দুই সিনিয়র নেতা বহিস্কারের ঘটনা বিরল। এর আগে শফিউল আলম প্রধানকে ৮ খুনের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
গত কয়েক দশক ধরে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ আরো কয়েকটি দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর সকল পর্যায়ের কিছু কিছু নেতা চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে আসছিল। কিন্তু আশির পর থেকে এই সমস্ত অপকর্মের বিরুদ্ধে কোন দলই কঠোর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমান সরকার এই সমস্ত অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এর থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও শিক্ষা নিবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
এর পর শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগর দক্ষিনের যুবলীগের সভাপতিসহ আরো কিছু নেতার কর্মকাণ্ডে বেজায় ক্ষেপেছেন। দক্ষিনের সভাপতি সম্রাটের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তিনি তার বাহিনীর মাধ্যমে ঢাকা শহরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ অন্যান্য অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন। তার এইসব কর্মকাণ্ডে দলের শুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছিল। এরই মধ্য এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এইসব নেতারা ঢাকা দক্ষিনের মতিঝিল, ফকিরাপুল,সেগুনবাগিচা, কাকরাইল ও কমলাপুরসহ বিভন্ন স্থানে অবস্থিত নামিদামি ক্রিড়া সংস্থার ক্লাবগুলিতে অবৈধ জুয়ার ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। প্রতিরাতে এই সমস্ত ক্লাবে জুয়া খেলা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা কমিশন পেতেন দক্ষিন যুবলীগের কতিপয় শীর্ষ নেতা। উক্ত এলাকার ক্লাবগুলিতে মদ ও মাদক দ্রব্যের ব্যবসাও চলছে সমতালে।
গত কয়েদিন ধরে এর বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ ভূইয়াকে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও বিপুল পরিমান নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খালেদ ঢাকা শহরে ১৭টি কেসিনোর ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করতেন। পাশাপাশি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজিসহ তার বিরুদ্ধে আরো ব্যপক অভিযোগ রয়েছে। এই খালেদ এক সময় ফ্রিডম পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। যুবলীগে সে অনুপ্রবেশকারী।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নিকেতন থেকে যুবলীগ নামধারী আরেক ডন গোলাম কিবরিয়া শামীমকে বিপুল পরিমান নগদ অর্থ, অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই সময় তার সাত অবৈধ অস্ত্রধারী দেহরক্ষীকেও গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে টেন্ডারবাজি করে আসছিল। এই শামীম এক সময় যুবদলের নেতা ছিল বলে জানা গেছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর দল পরিবর্তন করে সে যুবলীগে যোগ দিয়ে তার টেন্ডারবাজি ও হুন্ডির ব্যবসা অব্যহত রাখে।
আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারীর কারনে উল্লেখিত কেসিনো ক্লাবগুলি বন্ধ করে সটকে পড়েছে অনেকে। গত রাতে রাজধানীর কলাবাগান ও ধানমন্ডির দুটি ক্লাবে অভিযান পরিচালনা করেছে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কলাবাগান ক্রিড়াচক্রের ক্লাব থেকে বিপুল পরিমান মদ, নগদ টাকা ও জুয়া খেলার বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যব। এই সময় কলাবাগান ক্রিড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার তাকে আদালতে তুলা হলে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
সামনের দিনগুলিতে এই অভিযান অব্যহত থাকবে। এবং আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরো কঠোর হবে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্য বিভিন্ন অপরাধ জগতের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছে। অনেকে বিদেশে চলে গেছে। তবে এদের কারোরই শেষ রক্ষা হবে না বলেই ধারনা করা যাচ্ছে।