খালেদা জিয়ার মুক্তির দুটি পথ

বিডি খবর ৩৬৫ ডটকমঃ

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় ২২ মাস ধরে জেল খাটছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম জিয়া জেলে যাবার পর বিএনপি তার মুক্তির জন্য সরকারের ওপর তেমন কোন চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। এমনকি বড় ধরনের কোন সমাবেশ কিংবা মিছিল কিংবা চোখে পড়ার মত তেমন কোন কূটনৈতিক চাপও প্রয়োগ করতে পারেনি দলটি। তবে তারা শুধু বলে আসছে রাজনৈতিক মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সুনিদৃষ্ট দুর্নীতির মামলায় দীর্ঘদিন আদালতে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাজা সাবস্ত হয়েছে। এতে সরকারের কোন হাত নেই।

প্রথমদিকে মনে হয়েছিল খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হলে তাকে মুক্ত করার জন্য বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে। কিন্তু বাস্তবে তা চোখে পড়েনি। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয়টি সামনে এনে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্রচারনা চালায় বিএনপি। কিন্তু তাতেও সফল হয়নি তারা। পরে আইনগত বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ খুজতে থাকে দলটি। তারা খালেদা জিয়ার জামিন ও মুক্তির ব্যপারে একাধিক আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহন করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধানবিচারপতির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের বেঞ্চেও খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যত হয়। এর ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি বা জামিনের সব পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

 

খালেদা জিয়ার বর্তমান বয়স প্রায় ৭৪। এই বয়সে এমনিতেই মানুষ নানা শারীরিক সমস্যায় থাকে। ১৯৯০ ও ২০০২ সালে দুইবার খালেদা জিয়ার হাটু প্রতিস্থাপন হয়েছে। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে এরূপ প্রতিস্থাপন দীর্ঘদিন হওয়ায় এমনিতেই তাতে নানা সমস্যা থাকার কথা। এ ছাড়াও খালেদা জিয়ার হার্ট ও কিডনীতেও সমস্যা রয়েছে। বাতের সমস্যায়ও দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তিনি। তিনি এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে উচ্চ শক্তি সম্পূর্ণ মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে বেগম জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি চিকিৎসা করাচ্ছেন বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। ইতিমধ্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য।

তবে বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে আইনগতভাবে না দেখে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করায় জটিলতা আরো বেড়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে নিয়ে দলের ভিতরও রাজনীতি চলছে। খালেদা জিয়া জেলে থাকলে হাইকমান্ডের কারো কারো সুবিদা হয়। এই জন্য একটি পক্ষ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাচ্ছেন না বলেও অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। দলের ভিতরে এনিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব। সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির ব্যপারে। কিন্তু বিএনপি এটিতে সম্মত হচ্ছে না। বেগম জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে পারবেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারনে বিএনপি তাতে সায় দিচ্ছে না। তবে খালেদা জিয়া যে গুরুতর অসুস্থ্য তা ইতিমধ্য মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থ্যতার বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাতে চায় বিএনপি। এ থেকে জনগনের সহানুভুতি লাভের আশা করছে দলটি। কিন্তু বাস্তবে তাতে কোন ফায়দা হচ্ছে বলে মনে হয় না।

সব কিছু বিবেচনা করলে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দুটি পথই খোলা আছে- একটি প্যারোলে। আর অপরটি সরকারের পতন ঘটিয়ে। কিন্তু সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মত সামর্থ বিএনপির আছে বলে মনে হয় না। খালেদা জিয়ার জীবন থেকে রাজনীতি বড় নয়। এই বিষয়টি তারেক জিয়াকে বুঝতে হবে।  রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নাই। কি হয় তা দেখতে আরো অপেক্ষা করতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *