মক্ষীরানীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত আছে
র্যাবের সদস্যরা ৩ মাস লেগে থেকে তথ্য অনুসন্ধান করে সম্প্রতি শামীমা নুর পাপিয়াকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে তার স্বামী সুমন চৌধুরী ও আরো দুই সহযোগীকে ভারতে গমনের প্রাক্কালে গ্রেপ্তার করে। পাপিয়া গ্রেপ্তারের পর থেকেই পাপিয়ার পাপের সম্রাজ্যের নানা অজানা তথ্য বের হয়ে আসে। নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা করে পাপিয়া দম্পতি বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে যায়। কিভাবে পাপিয়া এত অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে তা র্যাবের অনুসন্ধানে বেড়িয় এসেছে।
পাপিয়া দম্পতি অবৈধ পন্থায় এই অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। অসামাজিক ব্যবসা থেকেই পাপিয়ার আয়ের সিংহভাগ আসে। প্রথমদিকে পাপিয়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মেয়েদের চাকুরীসহ নানা প্রলোবন দেখিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করত। তার এই অবৈধ ব্যবসাকে বাধাহীন করতে পাপিয়া স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। পরে তার এই অবৈধ ও অসামাজিক ব্যবসা আরো বিস্তার লাভ করে। এক পর্যায়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সুপারিশে পাপিয়া হয়ে যায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদিকা। নারী ও অর্থ ব্যবহার করে পাপিয়া এই পদ ভাগিয়ে নিয়েছে। পরে পাপিয়া আরো শক্তিধর হয়ে ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে দেহ ব্যবসার সম্প্রসারন করে। ইতিমধ্য পাপিয়া নানা কৌশলে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কিছু প্রভাবশালী নেতাকে অসামাজিক সার্ভিস প্রদান করে তাদের সাথে আরো সখ্যতা গরে তুলে। এক পর্যায়ে পাপিয়া এই সমস্ত নেতাদের তুষ্ট করে নানা কাজ ভাগিয়ে নিতে গুলশানের ৫ তারকা ওয়েস্টিন হোটেলের বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট স্যুট ভাড়া নিয়ে সেখানে রমরমা মদ ও দেহ ব্যবসা চালায়। আর এর আড়ালে পাপিয়া প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের অসামাজিক কাজে সহায়তা করে নানা তদবির বানিজ্য করে বিপুল অর্থের মালিক হয়। পাপিয়াদের সাথে পুলিশসহ সরকারী আমলাদেরও সখ্যতা আছে। যার ফলে পাপিয়ারা ধরা ছুয়ার বাইরে থেকে যায়।
নরসিংদীতে পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর একটি ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। এই বাহিনীর নাম কিউ সি। এই বাহিনীর মাধ্যমে পাপিয়া মুক্তিপন, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অবৈধ কাজ চালিয়ে আসছিল। নরসিংদীতে পাপিয়ার একটি টর্চার সেলও রয়েছে। এই সেলে বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ ধরে এনে নির্যাতন করে মুক্তিপন আদায় করা হত। পাপিয়ার জন্ম ১৯৯১ সালের ২৭শে অক্টোবর। সেই হিসাবে তার বর্তমান বয়স ২৯ এর নীচে। পাপিয়ার পাপের কাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর সারাদেশে তুলপাড় শুরু হয়েছে।
এই রকম মক্ষীরানী পাপিয়ারা বড় বড় সকল রাজনৈতিক দলেই রয়েছে। অবৈধ ব্যবসাকে কন্টকমুক্ত করতে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী সেজে দলের অফিসগুলিতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। সিনেমার নায়িকাদের মত সেজেগুজে তারা পার্টি অফিসে যায়। ক্ষমতাধর নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। নারী সরবরাহের মাধ্যমে নেতাদের তুষ্ট করে নানা তদবির শুরু করে। আস্তে আস্তে এই অসামাজিক কাজের পরিধি আরো বাড়াতে থাকে। এমনি করে পাপিয়ারা ক্ষমতাধর হয়ে উঠে।
ক্ষমতাসীন দলের পাপিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। পাপিয়াদের অনেকেই গাঁ ঢাকা দিয়ে আছে গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য। পাপিয়াদের যারা নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে। পাপিয়াদের সহযোগিতা করে আসা রাঘব বোয়ালরা শীঘ্রই ধরা পড়বে বলে আশা করছে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এরা অতি ক্ষমতাধর হওয়ায় সাবধানে এগুচ্ছে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।