মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, জোয়ারি, ফন্দিবাজ, ফিকিরবাজরা মিশে গেছে যুবলীগেঃ
২০০৬ সালের শেষদিকে আওয়ামীলীগ ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলির নানা দাবি ও নানামুখী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ২০০৭ সালে সরকার নিয়ে চলে নানা নাটকীয়তা। ফলে এই সময়ে দুইবার তত্বাবধায়ক সরকারের আগমন ঘটে। এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে জেলেও যেতে হয়। ২০০৭ সালেই জনমত জরিপে আওয়ামীলীগের জয়ের নিশ্চিত আভাস পাওয়া যায়। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছিল ততই আওয়ামীলীগের জয়ের সম্ভাবনা র্যাপিডলি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে জনগন নিশ্চিত হয়ে যায় যে আওয়ামীলীগই আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত জয় লাভ করবে। আর ঠিক এই সময় থেকেই আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনে নানা ধরন ও শ্রেনীর সুবিদাবাদী গোষ্টী অনুপ্রবেশ করতে থাকে। অবশ্য যদি বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা থাকতো তা হলে এই গোষ্টী হয়ত বিএনপিতেই অনুপ্রবেশ করতো। এরা হল এই দেশের ধান্ধাবাজ, ফিকিরবাজ, ফন্দিবাজ, চাঁদাবাজ, জোয়ারী, বালু ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী, বিশেষ বাহিনীর দালাল, দখলবাজ ইত্যাদি। নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য এদের দরকার সরকারি দলের ছত্রছায়া ও নেতা বনে যাওয়া।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে উপরোক্ত সুবিদাবাদীরা আওয়ামীলীগে ব্যপকভাবে অনুপ্রবেশ করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিশাল সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। আর এই ধান্ধাবাজরা ক্রমে আওয়ামীলীগে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এরা নানান সময়ে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নানা ধরনের উপহার কিংবা আর্থিক সহযোগীতা করে নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের ভাগ দিতে থাকে বিশেষ শ্রেনীর নেতাদের। এদের অবৈধ ব্যবসার (মাদক ব্যবসা, জোয়া, অবৈধ বালু ব্যবসা, অটো স্ট্যান্ডের চাঁদা, দালালী, সাধারন মানুষকে বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে হয়রানি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করা, জমি দখল ইত্যাদি) উপার্জিত টাকা মাসে মাসে বিশেষ বিশেষ নেতা ও স্থানে বন্টন করে এরা নেতাদের ও বিশেষ স্থানের নজরে আসে। এক পর্যায়ে এই সমস্ত ধান্ধাবাজরা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংঠনের সভাপতি কিংবা সেক্রেটারী কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যায়। আর এখানে সংগঠনের ত্যগী নেতারা হয় বঞ্চিত। এভাবে টাকার বিনিময়ে পদ বিতরন করে অযোগ্য ও সুবিদাবাদীদের দলে স্থান দেওয়া নিজের পায়ে কুড়াল দেওয়ার সামিল। অবৈধ ব্যবসার টাকার গরম দেখিয়ে এরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এলাকা এলাকায়। এদের মাধ্যমে নানাভাবে সাধারন মানুষ হচ্ছে নাজেহাল।
এই সমস্ত নব্য আওয়ামীলীগারদের কাছে দল ও ত্যগী নেতাকর্মীরা কোনঠাসা হয়ে আছে। এদের অপকর্মের কারনে আওয়ামীলীগ ও সরকারের বদনাম হচ্ছে। বিগত ১২/১৩ বছরে আওয়ামীলীগ সরকার সারাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করলেও সবকিছু ম্লান হয়ে যাচ্ছে এই সমস্ত নব্য ও সুবিদাবাদীদের অপকর্মের কারনে। এরাই দলে উপদল সৃষ্টি করছে। দলের ভিতরে পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি করছে। এদের কারনেই স্থানে স্থানে আজ আওয়ামীলীগ বিব্রত। নিজের স্বার্থ হাসিলের ব্যঘাত ঘটলেই নেতা পরিবর্তন করে। ভাগাভাগী নিয়ে বাধাগ্রস্ত হলেই নেতার বিরুদ্ধে চলে যায়। অন্য নেতার আশ্রয় নেয়। এভাবেই সারাদেশে এই শ্রেনী দলীয় কুন্দল সৃষ্টি করে চলেছে।
এই শ্রেনী রাজনীতি বলতে বুঝে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, জোয়ার আসর বসিয়ে টাকা কামানো, অটো স্ট্যান্ডের থেকে চাঁদা আদায়, মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, ওয়ারিশ নিয়ে জামেলা পাকানো, জমি বেচা কেনায় বাধা সৃষ্টি করে উভয় পক্ষ থেকে টাকা কামানো, নারীঘটিত ব্যপার নিয়ে জামেলা পাকিয়ে টাকা কামানো, সালিশে টাকা খেয়ে এক পক্ষকে জিতিয়ে দেওয়াসহ আরও নানা ধরনের অপকর্ম। বিশেষ বাহিনীর সাথে সম্পর্ক রেখে সাধারন মানুষকে ধরিয়ে দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবার ছাড়িয়ে আনাও এদের অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস। আর এই অবৈধ টাকার দাপটে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে। এলাকায় এরা দাপিয়ে বেড়াই দামি মটর সাইকেল কিংবা প্রাইভেট কার দিয়ে। এদেরকে সবসময়ই ঘিরে থাকে এদের সাঙ্গ পাঙ্গরা। অনেকটা সিনেমার ভিলেনের মত বাস্তবে এদের চাল চলন। এহেন গোষ্টী সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দলও পরিবর্তন করে আবার নতুন সরকারি দলের হয়ে যায়। মুলতঃ এরাই বর্তমান সরকারের ইমেজ নষ্টের জন্য দায়ী।
এই কুলাঙ্গার অনুপ্রবেশকারীরা অধিক মাত্রায় ঢুকে পড়েছে যুবলীগে। দেশের ৯০ শতাংশ অপকর্ম এই যুবলীগ নামধারীরাই করে থাকে। ফলে যুবলীগের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে যদি এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে যুবলীগকেই গিলে ফেলবে এই দানবেরা। এদেরকে যারা নেতা বানায় তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া অতীব জরুরি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে যুবলীগ নামধারী এই কুলাঙ্গাররা মূর্খ, অনেকে নিজের নাম লেখা দূরে থাক কখনো স্কুলের বারান্দায়ও যায়নি। এদের অনেকে আবার রাস্তায় বড় হয়েছে। অথচ শুধু মাত্র অবৈধ ব্যবসার আয়ের ভাগাভাগির মাধ্যমে কিছু লোভী নেতাদের ম্যানেজ করে এরা যুবলীগের বিভিন্ন ইউনিটের বড় বড় পদ দখল করে আছে। রাজনীতিকে এরা টাকা কামানোর মেশিন মনে করে। এরা যুবসমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে। নিজ দল ভারি করার জন্য নিরীহদের দলে নিয়ে অবৈধ কাজে লাগাচ্ছে। এদের দ্বারা সমাজ হচ্ছে কলুষিত। এরা দেশের শত্রু,জাতির শত্রু। এদেরকে চিহ্নিত করে দল থেকে বের দিলে যুবলীগ আবার হারানো গৌরব ও ঐতিয্য ফিরে পেতে পারে। এদের বিষদাঁত এখনই ভেঙ্গে দিতে হবে। এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এখন আওয়ামীলীগের দাবি, সাধারন মানুষের দাবি, সময়ের দাবি। বিঃদ্রঃ একই সময়ে যদি বিএনপি কিংবা অন্য কোন দল ক্ষমতায় থাকতো তাহলে এই কুলাঙ্গাররা নানা কৌশলে এই দলগুলিতে অনুপ্রবেশ করে একই কাজ করতো।