আমেরিকা বনাম রাশিয়ার যুদ্ধ কখন শেষ হবে?

২৪শে ফেব্রুয়ারী রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। রাশিয়া দাবি করছে ইউক্রেনে রুশভাষী ও রুশ সমর্থক নাগরিকরা অত্যাচারিত হচ্ছে। অপরদিকে ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের অত্যাচারের কারনে স্বাধীনতা চাচ্ছে। এই এলাকায় স্বাধীনতাকামীরা দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনের সরকারী বাহিনীর সাথে লড়াই করে আসছে। এমতাবস্থায় রুশভাষী ইউক্রেনীয়দের রক্ষা করতে রাশিয়া ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান চালানোর যুক্তি দেখাচ্ছে। এর আগে ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে দনবাসের লোহনস্ক ও দোনস্ক এলাকাকে স্বাধীন হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া।

২৪শে ফব্রুয়ারী থেকেই ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনারা ঢুকে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্য শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। ফলে উভয় পক্ষেরই ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে। আপাতঃভাবে এই যুদ্ধ রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্য হলেও আসলে এই যুদ্ধ চলছে মুলত রাশিয়া ও নেটোর মধ্য। নেটোর কিছু দেশ হয়ত এই যুদ্ধ চাচ্ছে না। কিন্তু এই অংশটা খুব একটা শক্তিশালী নয়। আর এই নেটোর নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইউক্রেনে মুলত যুদ্ধ চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্য। এই যুদ্ধ ক্ষেত্রটা শুধু ইউক্রেনে।

যুক্তরাষ্ট্রকে যে কোন দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বিশ্বে রাশিয়া বাদে আর দ্বিতীয় কোন দেশ নাই। এই দুটি দেশেরই রয়েছে বিশ্বের যে কোন দিক থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। একমাত্র রাশিয়াকে মোকাবেলা করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৭০ বছর আগে গঠিত হয় নেটো। শুরুতে সদস্য সংখ্যা ছিল ১২ এবং বর্তমানে ৩০। অল্প কয়েকটা দেশ বাদে ইউরোপের প্রায় সকল দেশই নেটোর সদস্য। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে যে সাম্রাজ্যবাদ চালাচ্ছে তা নেটোকে সাথে নিয়েই করছে। অর্থাৎ নেটো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীদের জোট। ইউরোপের দেশগুলিকে নিয়ে ইইউ নামে আরেকটি জোট রয়েছে। এটিও ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যপক প্রভাব খাটাচ্ছে। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে শত শত বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সর্বাধুনিক যত অস্ত্র আছে তা ইউক্রেনে সরবরাহ করছে। এমনকি পর্দার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনীয় বাহিনীর সাথে মিশে যুদ্ধ করছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। নানা ধরনের অবরোধ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেটো ও ইইউ রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তাতে সকল দিক দিয়েই ব্যপক ক্ষতির মুখে পরেছে রাশিয়া। অপরদিকে এই দেশগুলিও নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভংগ করছে। নিজেরাও ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর ইউক্রেনের জানমালের ব্যপক ক্ষতি সাধন করছে।

এই যুদ্ধের প্রভাব সারাবিশ্বেই পরেছে। বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের সংকট তৈরী হয়েছে। নিত্যপন্যের দাম সারা বিশ্বেই বেড়ে গেছে। বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বে খাদ্যের অভাব দেখা দিবে বলে আভাস দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র দেশগুলি। এমনকি এখনই বিশ্বের দেশে দেশে এখনই অভাব/সমস্যা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে এই যুদ্ধকে একটা টেস্ট বলে মনে করছে পশ্চিমারা। রাশিয়াকে তারা একটু বাজিয়ে দেখছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনেস্কিকে এরা তাদের এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের এজেন্ট হিসাবে কাজ করাচ্ছে। পাটাপুতার ঘষাঘষিতে ইউক্রেনের এখন বারোটা বেজে গেছে। তবে রাশিয়ারও ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এই যুদ্ধ পশ্চিমারা যেদিন চাইবে সেদিন হয়ত শেষ হবে।