সাজেদা চৌধুরীর জীবন বৃতান্ত
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা ছিলেন। তিনি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন এবং একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক বর্ষসেরা নারী নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
ব্যক্তি জীবন
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী ছিলেন। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৯–১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেন।
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন।। ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক ও ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের জাতীয় কমিশনার ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়কের দায়িত্বও পালন করেন।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে টেকনোক্র্যাট কোটায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে, তিনি ফরিদপুর (ফরিদপুর-২; নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।দশম ও একাদশ সাধারণ নির্বাচনেও তিনি এ জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি একই পদ অলংকৃত করেন।
মৃত্যু
তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবশেষে ১১ সেপ্টেম্বর রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।