যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশে আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে সেখানেই দেশ ও গনতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে!
বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কুটনৈতিকভাবে দৃশ্যত ২টি পক্ষ রয়েছে। এর একটির নেতৃত্ব দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অপরটির নেতৃত্বে আছে চীন। ভূরাজনৈতিক কারনে সারা বিশ্ব আজ এ দুটি পক্ষের যাতাকলে নিষ্পেষিত। সারা বিশ্বকে নিজেদের পক্ষে নিতে এই উভয় পক্ষই নানাবিদ চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে অভিরাম। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২০০৭ সালে গঠিত হয়েছে কোয়াড যা কৌশলগতভাবে মূলত একটি সামরিক সংস্থা যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আধিপত্তকে খর্ব করার জন্যই সৃষ্টি। অপরদিকে কোয়াডের পাল্টা জোট গড়েছে চীনও। যার নাম প্রথমে ছিল ব্রিক ( BRIC)। এতে রয়েছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও চীন। পরে ২০১০ সালে এতে সাউথ আফ্রিকা যোগ দিলে এর নাম হয় ব্রিকস ( BRICS)। আর কোয়াডে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। উভয় জোটেই রয়েছে ভারত।
যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগ দিতে পত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ভাবেই চাপ প্রয়োগ করে আসছে। অপরদিকে চীনও ব্রিকসে যোগ দিতে বাংলাদেশকে চাপ অব্যহত রেখেছে। ব্রিকসের অনুকুলে রয়েছে বিশ্বের ৩২০ কোটি মানুষ যা সারাবিশ্বের জন সংখার ৪০ শতাংশ। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও শ্রীলংকা ব্রিকসের অনুকুলে রয়েছে। বাংলাদেশও ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোয়াডে যোগ না দেওয়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বাংলাদেশ তথা বর্তমান সরকারের ওপর নাখোশ। তাই নানামুখী চাপের অংশ হিসাবে র্যাবের কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও দেশে এমনকি বিদেশেও র্যাবের কর্মকাণ্ড বেশ প্রশংসা পাচ্ছে।
রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ ভোটদানে ভিরত থাকে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা হাসিনা সরকারের ওপর বেশ নাখোশ হয়। পরে হাসিনাকে ম্যানেজ করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কয়েক দফায় দূতও পাঠায় এবং এখনো তা অব্যহত আছে। কিন্তু ঐতিহাসিক কারনেই বর্তমান সরকার রাশিয়ার পক্ষে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এতে যুক্তরাষ্ট্র হাসিনা সরকারের ওপর আরও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। শাস্তি স্বরুপ বাংলাদেশের ওপর চলে আসে ভিসা নিষেধাজ্ঞা। তবে দৃশ্যত হাসিনা সরকার তাতে ভীত নয় বলেই মনে হয়। কিন্তু এদেশের বিরোধী দল আবার বিদেশী মোড়লিপনাকে প্রকাশ্যেই স্বাগত জানাচ্ছে।
বিশ্বের ২২টি দেশে আগামী কয়েক মাসের মধ্য নির্বাচন হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা শুধু বাংলাদেশকে নিয়েই মেতে আছে। বিধিবহির্ভূতভাবে যুক্তরাষ্ট্র, তার নিয়ন্ত্রনে থাকা বিভিন্ন সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূতসহ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা নানা সংস্থা দিয়ে হাসিনা সরকারের বিরোধীতা করে যাচ্ছে বিবৃতি দিয়ে। কয়েকজন মার্কিন কংগ্রেসম্যান সরাসরি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করেছে। দফায় দফায় তুচ্ছ ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশে আসছে মার্কিন বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। উদেশ্য একটাই এবং তা হল হাসিনা সরকারকে চাপে রাখা যাতে করে বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগদান না করে।
ইদানিং গনতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে তারা কথা বলছে। খুদ তাদের দেশে কি গনতন্ত্র আছে? কিশের মানবাধিকার, তাদের দেশে কি মানবাধিকার আছে? যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গোলাগুলিতে একাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল, মার্কেট ও উপাসনালয়ে বন্দুক হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে মারছে হামলাকারীরা। আবার এ সমস্ত হামলাকারীও পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে। এটাও তো ক্রস ফায়ার। আইন শৃংঙ্খলা রক্ষা করতে সে দেশের পুলিশ হামলাকারীকে বন্দুক যুদ্ধের নামে মেরে ফেলছে। আর বাংলাদেশে কোন কুখ্যাত সন্ত্রাসীকে ক্রস ফায়ারে দিলে তারা মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এসব তাদের অস্ত্র। কোন দেশ অথবা সরকারকে পছন্দ না হলে তারা এসব অস্ত্র ব্যবহার করে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ মারা গেল। ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত গেল। তথাপিও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকেই সমর্থন করলো এবং পাকিস্তানের পক্ষে সপ্তম নৌবহর পাঠালো। কোথায় ছিল তখন মানবাধিকার ও গণতন্ত্র? ২ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে এসে পাকিস্তান অসাংবিধানিকভাবে এদেশ শাসন করবে-এটা বুঝি গণতন্ত্র?
যে সমস্ত দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করেছে সেই সমস্ত দেশ ধ্বংশ হয়েছে। লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ আরো অনেক দেশ মার্কিনীদের চাপিয়ে দেওয়া গণতন্ত্র ও তথাকথিত মানবাধিকারের নামে ধ্বংস হয়েছে। সাদ্দাম হোসেন, গাদ্দাফীসহ আরও অনেক বিশ্বনেতাকে তারা অন্যায়ভাবে মেরে ফেলেছে। তারা আবার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আর তাদের সাথে রয়েছে এ দেশের কিছু দালাল- আরও কঠোর ভাষায় বললে নব্য রাজাকার। দেশ ধ্বংসের এই অপতৎপরতাকে রোখে দিতে না পারলে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সবই থেমে যাবে এবং দেশ পাকিস্তানের মত অবস্থায় চলে যাবে যা আমাদের কাম্য নয়।