উভয় সংকটে বিএনপি!
বেগম খালেদা জিয়া ও ছেলে তারেক জিয়ার নির্দেশেই মুলত বিএনপি চলে। আর এই দুইজনের একচ্ছত্র আধিপত্য মেনেই বিএনপির সকল কর্মকাণ্ড চলে। মা-ছেলের নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপিতে আলোচনা-সমালোচনা খুব কমই হয়। বিএনপিতে এমন স্পেসও নাই। দুর্নীতির দায়ে দুজনেই কারাদন্ডে দন্ডিত। দন্ডিত হয়ে জেলে যাবার আগে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তারেক জিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করেন বেগম খালেদা জিয়া। আর তারেক জিয়া সেনা শাসিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে লন্ডনে চলে যান। সেই থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রয়েছেন লন্ডনেই। ব্রিটিশ পাসপোর্টে এখন তিনি যুক্তরাজ্যেই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন। আর লন্ডনেই বসেই বিএনপিকে পরিচালনা করছেন তিনি। এখন মুলত তারেক জিয়ার নির্দেশেই দলীয় সকল কর্মকাণ্ড চলে। বলা যায় এখন তারেক জিয়ার একক নির্দেশেই দল চলে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হলেও শুধু মাত্র বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার আনুগত্য ছাড়া তার পদও থাকবে না। তাই বিএনপিকে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সব সময় লন্ডনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।
বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। আর তা করতে গিয়ে সহিংস আন্দোলন শুরু করে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে। কিন্ত তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। ঐ নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করা বিএনপির ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। তারপর ২০১৮ সালের নির্বাচনও প্রথমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরে নির্বাচনে আসে। যখন তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন তাদের হাতে প্রস্তুতির সময় ছিল না। ডিলেডালা অংশ গ্রহনের মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এমনটি প্রমান করাই যেন তাদের কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হল। ফলশ্রুতিতে বিএনপি মাত্র ৬টি আসনে জয় লাভ করে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বেগম খালেদা জিয়া জয়লাভ করলেও পরে তারা পদত্যগ করেন। এরপর থেকে পথ হারিয়ে ফেলে বিএনপি। সরকারের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচী দিলেও সফলতার সাথে পালন করতে পারেনি তারা। অহিংস থেকে সহিংস কর্মসূচীতেই তারা বেশী সময় দিয়েছে। ফলে মামলার বেড়াজালে আটকে যায় বিএনপি নেতৃত্ব। এই সময়ে তারা বিদেশীদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বিদেশী দূতাবাস গুলিতে বিএনপির দৌড়ঝাপ বেড়ে যায়। ফলে বিদেশীরাও আমাদের দেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। একপর্যায়ে এরা নিজেদেরকে বাংলাদেশের প্রভু মনে করা শুরু করে। বিদেশীদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে সরকার কঠোর বার্তা দেয়। এতে এরা স্ব স্ব দেশের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। বিএনপি নেতৃত্ব বিদেশীদের হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে তাদের সাম্রাজ্য বানাবার চেষ্টা করতে থাকে। সরকারের ওপরে তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের কৌশল অব্যহত রাখে। তাতে বিএনপি অতি মাত্রায় বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
বিগত ৬ মাস ধরে বিএনপি রাজধানীসহ সারাদেশে নানা ধরনের অহিংস কর্মসূচী পালনে ব্যস্ত থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এই কর্মসূচীতে কোন রকম বাধা দেওয়া হয়নি। এসব অহিংস কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বিএনপি ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে উঠছিল। কিন্তু অবশেষে গত ২৮শে অক্টোবর পরিকল্পিতভাবে আবার সহিংসতা চালিয়ে আইনের জালে ধরা পড়ে। তারা মনে করেছিল সহিংসতা চালিয়ে রাজধানী দখল করে সরকার উৎখাত করবে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। সংসদ বিলুপ্ত, শেখ হাসিনার পদত্যগ ও তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে না যাবার ঘোষনা দেয়। এখনো একই দাবিতে তারা লাগাতার হরতাল অবরোধ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের এই কর্মসূচীতে জনগনের অংশ গ্রহন না থাকায় সুফল আসছে না। এরই মধ্য নানা ধরনের দেশী-বিদেশী চাপ থাকা স্বত্বেও নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করে। আওয়ামীলীগসহ অধিকাংশ দল এখন মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত। কিন্ত কৃত কর্মের কারনে বিএনপির অধিকাংশ নেতা এখন জেলে। নির্বাচন অংশ গ্রহন না করতে তারা এখনো অনড় আছে।
বিএনপির অনেক নেতা আছেন যাদের নিজ এলাকায় অবস্থান ভাল এবং নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলে তাদের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশী। তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের কারনে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে পারছেন না। আবার অনেক নেতা আছেন এলাকায় তাদের অবস্থান সুসংহত না তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন নিয়ে ভাবছেন না। আবার বিএনপি এটাও জানে বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামীলিগকে হারিয়ে সরকার গঠন তাদের পক্ষে কোন ক্রমেই সম্ভব হবে না। তাই তারা ক্ষমতায় যাবার অন্য পথ খুজছেন। তা না হলেও আওয়ামীলীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাচ্ছেন ভিন্ন উপায়ে। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা কোনটিতেই সফল হবে না। যথা সময়েই নির্বাচন হয়ে যাবে। এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করলে নেতাকর্মীদের ধরে রাখা যাবে না। তাই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলে কিছু আসন যেমন পাবে তেমনই এর মধ্য দিয়ে দলে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে পারবে বিএনপি।
বিএনপির নির্বাচনে আসার প্রধান বাধা তারেক জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধী দলীয় নেতা হওয়া সম্ভব না। এই পদে দলের অন্য কেহ আসীন হোক তাও রাজনৈতিক কারনে তারেক জিয়া চাইবে না। তাই বিএনপি সম্ভবত নির্বাচন বাঞ্চালের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। কেননা প্রতিনিয়তই তারা বলে আসছে নির্বাচন হতে দিবে না। কিন্তু তাদের পক্ষে নির্বাচন বাঞ্চাল করা সম্ভব হবে না বলেই অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়।তবে দেশ ও দলের প্রয়োজনে বিএনপির নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা উচিৎ। জনপ্রিয়তা যাচাই ও বৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র সঠিক পথ নির্বাচন।