আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮% ভোট কাস্ট হতে পারে
আগামী ৭ই জানুয়ারী’২০২৪ এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ২৭টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর বিএনপিসহ ১৫টি নিবন্ধিত দল এই নির্বাচন বয়কট করছে। শুধু তাই নই নির্বাচন প্রতিরোধেরও ঘোষনা দিয়েছে তারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১৮৯৬ জন। এই নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১৯১৫১৪৪০। বিএনপি-জামাতসহ তাদের সমমনারা এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করায় ও ভোট প্রতিহতের ঘোষনা দেওয়ায় কাস্টিং ভোট নিয়ে ভোটারদের মাঝে চলছে নানা রকম হিসাব নিকাশ। তবে একেক জন একেক রকমের হিসাব কষছেন।
২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ইয়াজ উদ্দিন, ফখরুদ্দিন ও মইন উদ্দিনের তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হয়। এই নির্বাচনে ভোটাররা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিনা বাধায় নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। যার ফলশ্রুতিতে ৮৭.১৩% ভোট পড়ে এই নির্বাচনে। আওয়ামীলীগ এককভাবে ২৩০টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। মোট কাস্টিং ভোটের ৪৮.০৪% ভোট পায় আওয়ামীলীগ। অপরদিকে বিএনপি পায় ৩০টি আসন ও মোট কাস্টিং ভোটের ৩২.৫%। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট মোট কাস্টিং ভোটের ৫৬.৪৫% ভোট পায় ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট মোট কাস্টিং ভোটের ৩৭.৬১% ভোট পায়।
বিগত ১৫ বছরে আওয়ামীলীগ দেশে উন্নয়নমূলক অসংখ্য কাজ করেছে। ফলে এই দলটির জনসমর্থন আরও অনেক বেড়ে গেছে। আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বিগত একই সময়ে ব্যপক প্রপাকান্ডা ও সমালোচনাও হয়েছে। তবে এই সমালোচনা আওয়ামীলীগ বিরোধী শিবিরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দেশের ইতিহাসে সাড়া জাগানো সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট পদ্মা সেতু নিয়েও আওয়ামীলীগ বিরোধীরা ব্যপক সমালোচনা চালিয়েছে। কিন্তু এই সব সমালোচনায় সাধারন জনগন একেবারেই পাত্তা দেয়নি। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামীলীগের বিকল্প কোন শক্তিও তৈরী হয়নি যাতে করে জনগন আওয়ামীলীগের বিকল্প হিসাবে ঐ দলকে গ্রহন করবে। আওয়ামীলীগের জনসমর্থনের ধারে কাছেও নেই অন্য কোন দলের জনসমর্থন। বিগত ৫ বছরে দেশের অনেক টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। অনেক বড় বড় দুর্নীতিও হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে দেশে দ্রব্যমূল্যে বেড়ে গেছে। এই বিষয়টি নিয়ে জনগন চাপে আছে। কিন্তু এর মানে এই নই যে জনগন আওয়ামীলীগ কিংবা শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়া থেকে সরে গেছে। দেশের সবচেয়ে পুরাতন ও বৃহত্তম এই দলটির এদেশ গঠনে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে রয়েছে সবচেয়ে বেশী অবদান। দেশে মন্দের মাঝে সবচেয়ে ভাল দল আওয়ামীলীগই। এই দলটাকে হারিয়ে দেওয়া কিংবা পরাভূত করা অগনতান্ত্রিক উপায়ে ছাড়া সম্ভব না।
ফলে আমরা যদি ২০০৮ সালের প্রাপ্ত ভোটের হারকেই স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে ধরে নেই তা হলে বলা যায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন জোটের ৫৬.৪৫% ভোটারই আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে। যার মধ্য আওয়ামীলীগের এককভাবে ভোট রয়েছে ৪৮.০৪%। তবে এই ৪৮.০৪% ভোটারের সকলেই ভোট দিতে যাবে এমনটা নই। কিন্তু এটি কমে হয়ত কম পক্ষে এইবার এর থেকে ৪৩% ভোটার ভোট প্রদান করতে পারে। এর বাইরে মহাজোটের অন্যান্য শরীকদের ভোট আছে ৮.৪১%। এর থেকে কম করে হলেও ৫% ভোটার ভোট দিতে যাবে আসন্ন নির্বাচনে। এই গানিতিক বিশ্লেষন থেকে বলা যায় দ্বাদশ নির্বাচনে কম পক্ষে ৪৮% ( ৪৩%+৫% ) ভোট কাস্ট হতে পারে। তবে আরও বলা যায় বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোটের ভোটারও স্থানীয়ভাবে নানা মেকানিজমের কারনে ভোট দিতে যাবে। সে ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা যদি ২ থেকে ৩ শতাংশ ভোটারও হয় তা হলে বিএনপি জোটের ভোট বর্জন সত্ত্বেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ৫০ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে।