কোটা নিয়ে যা রটছে এবং বাস্তবে যা আছে
এক ভদ্র মহিলাকে তার বাচ্চারা প্রশ্ন করে কোটা কি? কোটা বিরোধী আন্দোলন কি? তিনি বললেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা পরীক্ষা ও মেধা ছাড়াই সরকারী চাকরি পাওয়ার নামই কোটা পদ্ধতি। আরেক ভদ্র মহিলার ধারনা এমনই। মেধাবীরা মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পায়না অথচ মুক্তি যোদ্ধার সন্তান হওয়াতে কোটার সুবিদা নিয়ে মেধা ছাড়াই সরকারি চাকরি পাচ্ছে। অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি কি এবং এই পদ্ধতি কিভাবে প্রয়োগ করা হয় তার কোন বাস্তব ধারনাই তাদের নাই। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমন ধারনাই পাওয়া যায়। এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা না বুঝেই কোটা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আবার আরেক শ্রেনী আছে বুঝেশুনেই অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর সরকার বিরোধীরা এইটাকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসাবে দেখছে। সপ্তাহ খানেক ধরে কোটা বিরোধী আন্দোলনে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন চাকরি প্রার্থীরা কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে না। আন্দোলনজীবীরা কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে। ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তিপাক’ এমন স্লোগান লেখা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আন্দোলন করছে। আসুন জেনে নেই কোটা ব্যবস্থা আসলে কি এবং কিভাবে প্রয়োগ হয়।
সমাজের অনঅগ্রসর শ্রেনী, জাতি, গোষ্টী ও বিশেষ অঞ্চলের মানুষ যাতে সরকারি চাকরিতে পিছিয়ে না থাকে সেই জন্য সরকারি চাকরি ব্যবস্থায় নিয়োগে যে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয় তা ই কোটা পদ্ধতি। ১৯৭২ সাল থেকেই এর প্রয়োগ হয়ে আসছে। ১৯৭২ থেকে ৭৬ সাল পর্যন্ত মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হত ২০% এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ হত ৮০%। ১৯৭৬ সাল থেকে থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হত ৪০% এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ হত ৬০%। আবার ১৯৮৫ সাল থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হত ৪৫% এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫৫%। পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগ সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ আরও ১% বাড়িয়ে ৫৬% করে। ফলে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান কোটা বন্টন ছিল মুক্তিযোদ্ধা-৩০%, নারী ১০%, জেলা-১০%, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী(উপজাতি)-৫% ও বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শ্রেনী ১%। বাকি ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত এভাবেই চলে আসছিল। ২০১৮ সালে কোটা বিরোধী আন্দোলনের দাবির মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা রহিত করে। এর বিরুদ্ধে ২০২১ সালে হাইকোর্টে আপিল হয়। সম্প্রতি হাইকোর্ট কোটা বাতিল অবৈধ ঘোষনা করে রায় দেয়। তবে রায়ের পর্যবেক্ষনে বলে দেয় সরকার চাইলে কোটার হার পরিবর্তন করতে পারবে। এর বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ কেউ বুঝে আবার কেউ না বুঝে আন্দোলন শুরু করে। কোটা বিরোধী আন্দোলন সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে গত কয়েক দিনের অবরোধে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
কোটা পদ্ধতিতে যেভাবে নিয়োগ হয়। প্রথমত সকল ( সাধারন ও অগ্রাধিকার) প্রার্থীকেই প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এর পরই আসে কোটা বা অগ্রাধিকার। কাজেই যারা ভাইভা পর্যন্ত পাস করেন তারা সকলেই মেধাবী তাতে কোন সন্দেহ থাকার কথা না। তার পরেও কোটা নিয়ে নানা গুজব ছড়াচ্ছে আন্দোলনজীবীরা। সাধারন ছাত্রদের বিভ্রান্ত করে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চাচ্ছে বিশেষ মহল। তবে সাধারন মানুষের মধ্যে এমন ধারনা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোটা মানেই মুক্তি যোদ্ধার ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনীরা পরীক্ষা ও মেধা ছাড়াই সরকারি চাকরি পাচ্ছে। এই ধারনা ধারন করা অজ্ঞতা কিংবা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না।