সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে-কতটা যুক্তিক
কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক। সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে। সম্প্রতি কোটা বিরোধী আন্দোলনে এই সব স্লোগান লেখা ব্যানার/ফেস্টুন নিয়ে আন্দোলন করছে ছাত্ররা। রাজধানীর শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের ব্যানার/ফেস্টুন চোখে পড়ে। আবার এই সমস্ত জমায়েতে ছাত্ররা স্লোগান দিচ্ছে- কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক। সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে। এর অর্থ এই যে ছাত্ররা আর কোটা ব্যবস্থা চাচ্ছে না। তবে এইটা কি ছাত্রদের দাবি নাকি আন্দোলনজীবীদের দাবি তা পরিস্কার নয়।
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাঃ মুক্তিযোদ্ধা-৩০%, নারী-১০%, জেলা-১০%, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টী ৫% ও বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ মানুষ-১%। মোট ৫৬ শতাংশ নিয়োগ হয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। বাকি ৪৪% নিয়োগ হয় সাধারন কোটায়। ২০১৩ সাল থেকেই দেখা যায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ার কারনে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০% পুরন হয় না। সর্বশেষ দেখা যায় এই কোটায় মাত্র ৮% পুরন হয়েছে। বাকি ২২% সাধারন কোটা থেকে পুরন করা হয়েছে। তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংস্কার/পরিবর্তন দরকার। দাবি হওয়া উচিৎ কোটা ব্যবস্থা সংস্কার।
মানুষের মাধ্যে এমন ধারনা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা পরীক্ষা ছাড়াই সরকারি চাকরি পেয়ে যাচ্ছে কোটা ব্যবস্থার কারনে। আসল কথা হলো সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর চাকরির ক্ষেত্রে সকল প্রার্থীকেই প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইভা পাস করতে হয়। আর যারা এই ৩টি ধাপ পাড় হয় তারা সকলেই মেধাবী। এই ৩টি ধাপ পাস করার পরই আসে কোটার কথা।
বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থায় নারীদের জন্য ১০% কোটা/অগ্রাধিকার আছে। যদি কোটা ব্যবস্থার কবর দেওয়া হয় তা হলে নারীরা এই বিশেষ অগ্রাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পুরুষের তুলনায় সরকারী চাকরি ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়বে। স্বাভাবিক কারনেই নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারবে না। বাস্তবতা হলো কোটা প্রথা কবর দেওয়ার আন্দোলনে নারীরাও অংশ গ্রহন করেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এদের কি আসলে কোটা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারনা আছে? যদি ধরে নেওয়া হয় ধারনা নাই তা হলে নিজের পায়ে এরা কুড়াল মারছে। আর যদি ধারনা থাকে তা হলে ধরে নিতে হবে এরা আন্দোলনজীবী। আন্দোলনই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
দেশের সকল জেলার শিক্ষা কিংবা জ্ঞান অর্জনের সমান সুযোগ নাই। ফলে ঢাকার সাথে প্রতিযোগিতা করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন জেলার প্রার্থীদের সরকারি চাকরি পাওয়া অনেকটাই কঠিন। সেই জন্যই জেলা কোটা রাখা হয়েছে। যাতে করে সকল জেলা থেকে সরকারি চাকরিতে সুযোগ পায়।
দেশের মুল অংশ থেকে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টী সব দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। ফলে এরা যাতে মুল ধারায় থাকতে পারে সেই জন্যই এদের জন্য ৫% কোটা বিদ্যমান। যদি কোটা প্রথা নিপাত যায় তা হলে এরা আরও পিছিয়ে পরবে।
শুধু তা ই নই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের জাতি, গোষ্টী, বর্ণ, সম্প্রাদায়ের ছাত্ররা যাতে বিশেষ সুযোগ পায় সেই জন্য কোটা পদ্ধতি বহাল আছে। অন্যথায় এরা পিছিয়ে পড়বে। এমনকি আমাদের জাতীয় সংসদেও মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন আছে ৫০টি। এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য দেশী-বিদেশী নানামুখী চাপ রয়েছে।
কোটা ব্যবস্থা হঠাৎ করে আসে নাই কিংবা বর্তমান সরকার করে নাই। অতীতের সব সরকারই এই ব্যবস্থায় নিয়োগ দিয়ে আসছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির মুল টার্গেট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল। তাহলে এই রাজারকাররা দুধের সাধ গোলে মিঠাতে পারবে। অপরদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিয়ে সরকার পতনের চেষ্টা করবে। সেই জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলেদলে শিবির কর্মীরা ঢাকায় এসে কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে।