১৫ই জুলাই কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আসলে কি ঘটেছিল
রাজধানীজুড়ে দুর্বৃত্তদের ধ্বংসলীলা
কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ভয়ংকর ভীতিকর অবস্থা তৈরী হয়েছিল রাজধানীসহ সারাদেশে। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পুজি করে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি-জামাত, ছাত্রদল-ছাত্র শিবির ও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্টি। সরকার, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।আবার প্রত্যক্ষভাবেও এমনটি দেখা গেছে।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার পতনের অভিলাষে সারাদেশ থেকে কর্মীদের ডেকে এনে ঢাকায় জড়ো করে ইসলামী ছাত্র শিবির। এরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিবির নিয়ন্ত্রিত মেস ও বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সাধারন ছাত্রদের সাথে মিশে কোটা বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহন করে। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করে তারা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরী করে। এদের সাথে যোগ দেয় ছাত্র দলের নেতাকর্মীরাও। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এরা জমায়েত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর সন্নিহীত এলাকায়। ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ও রাজু ভাস্কর্যে কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে এর নিয়ন্ত্রন নেয় তারা। অপরদিকে ফেসবুকের মাধ্যমে নানা গুঁজব ছড়িয়ে ছাত্রসমাজকে ছাত্রলীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে ভিক্ষুদ্ধ করে তুলে সুপরিকল্পিতভাবে। গুজবপ্রিয় সাধারন মানুষও গুজবে ব্যপকভাবে সারা দেয়। আর এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে সরকার পতনের চূড়ান্ত নীল নকসা তৈরী করে বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-ছাত্র শিবির ও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্টী।
১৪ই জুলাই সোমবার কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দিয়ে সারাদেশে্র বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা মিছিল-অবরোধসহ নানা কর্মসূচী পালন করে। এদিকে সরকার ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার অব্যহত রাখে তথাকথিত আন্দোলনকারীরা। ততক্ষনে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন হাইজ্যক করে নেয় বিএনপি-জামাত, ছাত্রদল-শিবির ও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্টী। বাম ছাত্র সংগঠনও এই সুযোগে কোটা বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার তুঙ্গে উঠে। সুযোগ সন্ধানীরা উৎপেতে থাকে।
১৫ই জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই সাথে একই দিনে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভের ডাক দেয় তারা। অপরদিকে একই দিনে ছাত্রলীগও দুপুর তিনটায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ ডাকে। একদিকে দুপুর ১২টায় রাজু ভাস্কর্যে শুরু হয়ে বক্তব্য-কোটা বিরোধী স্লোগান চলতে থাকে, অপরদিকে তথাকথিত সাধারন ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক/মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যপক তান্ডব চালিয়ে ভীতিকর অবস্থা তৈরী করে ও ব্যপক ভাংচুর চালায়। তাতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। আগের দিন ঘোষনায় ছিল ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হবে। কিন্ত ষড়যন্ত্রকারী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন ও জনগনের চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। অর্থাৎ ঘোষনা বহির্ভূত কর্মসূচী পালন করে জনজীবনে অশান্তি নিয়ে আসে।
এদিন বেলা আড়াই টায় রাজু ভাস্কর্যে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের একটি অংশ মারমুখী হয়ে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে হল পাড়ার দিকে অগ্রসর হয়। দুপুর পৌনে ৩টার দিকে তারা বিজয় একাত্তর হল, সূর্যসেন হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল, জিয়া হল ও জসিম উদ্দিন হলের গেটে এসে ছাত্রলীগের নামে নানা অসালীন স্লোগান দেয় ও রিক্সায় থাকা মাইকে ছাতলীগের বিরুদ্ধে নানা রকমের গুঁজব ছড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হল সমূহের গেট ভাংচুর করে ও স্লোগান দিতে দিতে হল থেক অনেক ছাত্রকে তাদের মিছিলে যোগ দিতে বাধ্য করে। এই সময় তারা হলের বিভিন্ন ফ্লোরে ঢিলও ছুড়তে থাকে। এই পর্যায়ে এই সমস্ত হলের বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থানরত ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠিসোটাসহ হল গেটে নেমে আসলে দুই পক্ষের মধ্য শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে থাকা পাথর ও ইটের কনা দিয়ে তারা ছাত্রলীগের উপর হামলা চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা আরও সংঘবদ্ধ হয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে পিটিয়ে মল চত্তর এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়। অপরদিকে রাজু ভাস্কর্য দখল করে রাখা আন্দোলনকারীদেরও ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বাহির করে দেয়। এই সময়ে উভয় পক্ষের হতাহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যায়। সেখানে আবারও উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারী হয়। এর পর পুরো ক্যম্পাস ছাত্রলীগের দখলে চলে যায়। অপরদিকে কোটা বিরোধীরা সহিদুল্লাহ হল ও চানকারপুলে অবস্থান নেয়। রাত ১০টা পর্যন্ত অত্র এলাকায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া অব্যহত থাকে। এদিন কোটা বিরোধীরাই প্রথমে ছাত্রলীগের ওপরে হামলা চালায়। অথচ গুঁজব ছড়ানো হয় ছাত্রলীগ সাধারন ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে।